বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: ফের গুরুতর অসুস্থ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিন ধরে সিওপিডি–র (ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ) সমস্যায় ভুগছেন তিনি। শেষ ১৫ বছর ধরেই তাঁর সিওপিডি–র সমস্যা রয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায় তাঁর। কিন্তু বুধবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তাঁর অবস্থা ছিল সঙ্কটজনক। রাতের দিকে অবশ্য অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। বুদ্ধদেববাবুর বয়স ৭৬।
এখন কলকাতায় শীত পড়ছে। জানা গিয়েছে, আবহাওয়ার এই পরিবর্তন সহ্য হচ্ছিল না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ রয়েছেন। তার মধ্যে আবহাওয়ার পরিবর্তন তাঁকে অনেকটাই কাবু করে দেয়। কিন্তু কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। এমনকী, বুধবার সকাল থেকেই তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে কমতে ৭০–এর নীচে নেমে যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উডল্যান্ডসে এখন চিকিৎসাধীন তিনি। হাসপাতালে তাঁকে বাইপ্যাপ দিতে হচ্ছে। জ্বর রয়েছে। করোনা পরীক্ষা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। সূত্রের খবর, আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে কোভিড পরীক্ষা করা হয় তাঁর। পাঁচজন চিকিৎসকের একটি দল তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে বেশ কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পর তিনি পাঁচজন চিকিৎসকেরই পর্যবেক্ষণে থাকতেন। তাঁকে নিয়মিত দেখতেন ফুয়াদ হালিম। তাঁর অসুস্থতার খবরে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ছুটে যান সিপিএম–সহ বাম নেতারা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও। যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁরা মুখ খোলেননি।
সন্ধের সময় তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য কামনা করেন। বলেন, ‘তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন। আমি তাঁর সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।’ হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘সঙ্কটজনক হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা স্থিতিশীল। চিকিৎসায় তিনি সাড়া দিচ্ছেন। চিকিৎসকরা তাঁর অবস্থার দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছেন। আমি আসার আগের এক ঘণ্টার মধ্যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অবস্থার আশাব্যঞ্জক উন্নতি হয়েছে। রক্তে কমেছে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা। আগে এর মাত্রা ছিল একশোর বেশি। এখন পঞ্চাশের নীচে নেমে এসেছে।’ উল্লেখ্য, অক্টোবর মাসে দুর্গাপুজোর সময় অষ্টমীর রাতে তিনি বুদ্ধদেববাবুর পাম অ্যাভিনিউর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারের সেই ছবি টুইট করেছিলেন রাজ্যপাল। সেই সময় বুদ্ধদেববাবু বেশ অসুস্থ ছিলেন। তখনই তাঁকে শয্যাশায়ী দেখা যায়।
এদিকে, গোপালনগরে রাজনৈতিক সভা করার সময়ই এই খবর পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে তিনি তাঁর সুস্থতা কামনা করেন। তিনি লেখেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শুনে আমি যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।’ গোপালনগর থেকে তিনি মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে হাসপাতালে গিয়ে বুদ্ধবাবুর খবর নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তার পর তিনি কলকাতায় ফিরে হাসপাতালে চলে যান তাঁকে দেখতে। সেখানে প্রথমে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পর তাঁর দেখা হয়ে যায় বুদ্ধকন্যা সুচেতনার সঙ্গে। তাঁকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কিছুর জন্য সব সময় তৈরি থাকতে হয়। আমরা সবাই তোমাদের পরিবারের পাশে রয়েছি।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি বলেন, ‘প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অসুস্থতার খবর পেয়ে খুবই উদ্বেগে রয়েছি। বিষণ্ণ লাগছে। দ্রুত তাঁর আরোগ্য কামনা করছি।’
উল্লেখ্য, বাম জমানায় ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামে আন্দোলন ও রক্তক্ষয়ী সঙ্ঘর্ষের ঘটনা তাঁর সময়েই হয়। মনে করা হয়, ওই দুটি ঘটনাই বাংলায় বাম জমানার অবসান ঘটায়। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে অবশ্য ওই জোট সরকার থেকে সরে যায় কংগ্রেস। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৮ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি রাজ্য সচিবালয় থেকে পদত্যাগ করেন।